সাকিন শাহ
ধর্মপাশায় এনামুল হক শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত
ধর্মপাশায় এনামুল হক শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত।
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় অভাবের সঙ্গে নিরন্তর লড়াই করে, অদম্য মেধা আর অপরিসীম পরিশ্রমের বলে এক গরিব কৃষক পরিবারের সন্তান এনামুল হক শুভ ৪৪তম শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার পাইকরাটি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত বরইহাটি গ্রামে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। শুভর এই অর্জন শুধু একটি ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এলাকার গরিব-মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও আশার আলো।
আর্থিক সংকটে জর্জরিত, অথচ মেধায় উজ্জ্বল
এমদাদুল হক সুজন নামের এক কৃষক পিতার সন্তান শুভ। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় তিনি। কৃষিকাজের আয় দিয়ে সংসার চালানোই ছিল সুজনের পক্ষে কঠিন। বই-খাতা কেনা, কোচিং ফি জোগানো—প্রতিটি পদক্ষেপই ছিল সংগ্রাম। শুভ নিজেও বাবার কাজে হাত বাড়াতেন। কিন্তু এই প্রতিকূলতার মধ্যেও তার একটাই লক্ষ্য ছিল পড়াশোনা করে শিক্ষক হয়ে দেশের সেবা করা। স্থানীয় বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতকে তার ফলাফল ছিল ঈর্ষণীয়। শিক্ষকরা তার অধ্যবসায়ের ভূয়সী প্রশংসা করতেন।
অবশেষে সাফল্যের মুহূর্ত দীর্ঘ প্রস্তুতি আর কঠোর পরিশ্রমের পর ৪৪তম শিক্ষা ক্যাডার পরীক্ষায় অংশ নেন শুভ। প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষায় কঠোর লড়াই শেষে তার নাম চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্তদের তালিকায় স্থান পায়। খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই গ্রামের বাড়ি হয়ে ওঠে উৎসবের মিলনকেন্দ্র।এই সুসংবাদে আনন্দিত হয়ে শুভর নানা বাদশা গঞ্জ বাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হারুন মিয়া বাদশা গঞ্জ বাজারে মিষ্টি বিতরণ করেন ।
গর্বিত বাবা এমদাদুল হক সুজন চোখে অশ্রু নিয়ে বলেন, অনেক কষ্টে ছেলেকে পড়ালাম। আজ সে সরকারি চাকরি পেয়েছে। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ এই দিন। বাদশা গঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় স্কুলের শিক্ষক জনাব নূরে আলম জিকু বলেন,শুভর মতো মেধাবী ও সংগ্রামী ছাত্র সত্যিই বিরল। তার সাফল্য আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা।
স্বপ্ন ও প্রত্যাশা শুভ নিজে তার সাফল্যে আবেগাপ্লুত। তিনি বলেন,অভাবের কারণে অনেক দিন মনের মতো বই কিনতে পারিনি। আজ আমার স্বপ্ন সত্যি হলো। আমি একজন দক্ষ ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক হিসেবে গরিব-মেধাবী শিশুদের আলোর পথ দেখাতে চাই, বিশেষ করে আমাদের মতো প্রত্যন্ত গ্রামের। তার ইচ্ছা, তার সাফল্য যেন এলাকার আরও ছেলেমেয়েদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
এক অনন্য প্রেরণা এনামুল হক শুভর গল্প শুধু একটি চাকরি পাওয়ার গল্প নয়। এটি দারিদ্র্যের শৃঙ্খল ভেঙে মেধা, অধ্যবসায় ও স্বপ্নের জোরে কী অসাধ্য সাধন করা যায়, তার প্রমাণ। ধর্মপাশার এই গরিব কৃষকপুত্র আজ হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থীর কাছে প্রেরণার নাম। তার এই সাফল্য ধর্মপাশা, সুনামগঞ্জ তথা দেশের প্রতিটি প্রত্যন্ত গ্রামের মেধাবী তরুণের মনে জাগাবে নতুন আশা যে স্বপ্ন দেখলে, লড়াই করলে, সফলতা নিশ্চিতই আসে।